ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৮ই বৈশাখ ১৪৩২


নাসিরনগরে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক


২৭ জানুয়ারী ২০২৫ ২১:৪৩

আপডেট:
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০২

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যেন বিদ্যুতের ট্রন্সফরমার চুরি থামছেই না।সদর ইউনিয়নের দাতমণ্ডল গ্রাম থেকে গত ৭ জানুয়ারি রাতে সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত চারটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের জানানো হলে তারা নিজ খরচে ট্রান্সফরমরার স্থাপনের পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কৃষকরা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এ উপজেলা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তারা বলছেন, সেচ দিতে না পারলে বোরো চাষ ব্যাহত হবে। আতঙ্কে রাত জাগতে হচ্ছে তাদের। 

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর ভাষ্য, শীত মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গেই উপজেলায় চুরি বেড়েছে। গত শুষ্ক মৌসুমের মতো শীতেও নিয়মিত লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে যখনই যে এলাকায় লোডশেডিং হয়, তখনই কোনো না কোনো এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়। তাদের ধারণা, এসব চুরির সঙ্গে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের প্রশিক্ষিত ইলেকট্রিশিয়ানরা জড়িত থাকতে পারেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক কর্মকর্তা। তাদের নিয়োগ করা কোনো ইলেকট্রিশিয়ান এসবে জড়িত নন বলেও দাবি করেন। তাদের ভাষ্যমতে, চুরি ঠেকাতে বারবার উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বাদী হয়ে মামলাও করেছেন। তারপরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এক বছরে প্রায় ১০০ ট্রান্সফরমার চুরি হলেও এসব ঘটনায় কেউই আটক হয়নি। 

দাতমণ্ডল গ্রামের কৃষক উবায়দুল হক বলেন,চুরির ঘটনা জানানোর পর পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা নিজ খরচে ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে বলেন। এদিকে বোরো ক্ষেতে সেচ দেওয়া মৌসুম চলে যাচ্ছে। এ কারণে কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। 

নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দুই মাসে উপজেলা থেকে ৩১টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের ৯টি, পূর্বভাগ ইউনিয়নের ৩টি, বুড়িশ্বর ইউনিয়নের ৬টি, গোকর্ণ ইউনিয়নের ৮টি, কুন্ডা ইউনিয়নের ২টি ও চাপরতলার ৫টি। এ ছাড়াও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ৮টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় এক বছরে প্রায় ৯০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। 

এদিকে ৯ জানুয়ারি বুড়িশ্বর ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের দুইজন লাইনম্যানকে বেঁধে তিনটি সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার নিয়ে যায় চোরেরা। এতে ওই এলাকার কয়েকশ বিঘা জমির আবাদ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তিনটি ট্রান্সফরমার নতুনভাবে সংযোগ দিতে লাগছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। ওই এলাকার কৃষকরা জানান সঠিক সময়ে পানি না পেলে তারা বোরো আবাদ করতে পারবেন না। জমিতে ফসল না ফলালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে সবাইকে। 

উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়মিত সেচ প্রকল্পের ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে। এতে করে কৃষক সঠিক সময়ে জমিতে পানি দিতে পারছেন না। ফলে আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টিকে খুবই দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। 

নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ- মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, প্রায় একশর কাছাকাছি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। এতে স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র জড়িত। তাদের কর্মকর্তারা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এতে কেউই আটক হয়নি। চুরি রোধে পাহারা দেওয়াসহ এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। 

নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. খায়রুল আলম জানান ‘আমাদের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ বা গ্রাহক কেউই ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়ে অভিযোগ করেননি।’অভিযোগ ফেলে আইনগত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।