ঢাকা মঙ্গলবার, ২৮শে অক্টোবর ২০২৫, ১৪ই কার্তিক ১৪৩২


সুবর্ণচরের চাঁন্দা ডাকাতের ত্রাসের রাজস্ত্ব; র‍্যাবের অভিযানে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার


প্রকাশিত:
২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৫

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ত্রাস চাঁন মিয়া ওরফে চাঁন্দা ডাকাতকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১। এ সময় তার হেফাজত থেকে ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ১ রাউন্ড গুলি ও ১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে,গত পনের মাস অস্ত্রধারী চাঁন্দা ডাকাতের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়েছিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ৫ আগস্টের পর বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আলোচনায় আসেন চাঁন্দা ডাকাত। তার ভয়ে এলাকাছাড়া অনেক মানুষ, রাজনৈতিক কানেকশনে ভয় পেত পুলিশও। তার বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশের ছিল ব্যাপক অনীহা।

গ্রেপ্তার চাঁন্দা ডাকাত উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের চর আলাউদ্দিন গ্রামের মোজাম সর্দার বাড়ির আব্দুল বাতেনের ছেলে এবং মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিদারের ভাই।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরের দিকে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‍্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু। এর আগে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৩নম্বর ওয়ার্ডের আলআমিন বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব-১১ জানায়, চাঁন্দা ডাকাত এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে নিরীহ এলাকাবাসীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জুলুম, নির্যাতন ও চাঁদাবাজী করে আসছে। অস্ত্রও গুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামা করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র তার হেফাজতে রেখেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চাঁন্দা ডাকাত মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে চাঁদাবাজি, খামারের গরু, মহিষ, মাছ লুঠ করে হাতিয়ে নেয় প্রায় কয়েক কোটি টাকা। একই সাথে মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এই ইউনিয়ন। এক সময়ের শান্তির জনপদ মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এখন অশান্তিও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছে। মাদক,অবৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে স্থানীয় বাসিন্দারা। ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চাঁন্দা ডাকাত বাহিনী,ফারুক বাহিনীর এবং মাদককারবারি তোতলা বাহিনীর আবির্ভাব হয়। চাঁন্দা ডাকাত বাহিনী,ফারুক বাহিনী চালাচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। অপরদিকে, আওয়ামীলীগ নেতা তোতলা বাহিনী জমজমাট মাদক ব্যবসা চালাচ্ছেন। অনেকে এসব ঘটনা জেনেও না জানার ভান করায় মোহাম্মাদপুর ইউনিয়নের ৩০ হাজার বাসিন্দা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ বাহিনী গুলোর মধ্যে চাঁন্দা ডাকাত ও ফারুক বাহিনীর কাজ হলো স্থানীয় লোকজনের খামার থেকে গরু,মহিষ, ও মাছ লুঠ করে নিয়ে অন্যত্র বিক্রী করে দেওয়া। আর তোতলা বাহিনীর কাজ হলো চট্রগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা সংলগ্ন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর থেকে নদীপথে মাদকের চালান মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ঘাট দিয়ে এনে সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন, সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা।

মোহাম্মাদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.আলাউদ্দিন বলেন, চাঁন্দা ডাকাত ও কালাম মাঝির ভাই মো.ফারুক মাঝি মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার ভাইদের খামার থেকে ২০টি মহিষ, ২৬ টি গরুও বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কোটি টাকার মাছ ও ক্ষেতের ধান লুট করে নিয়ে গেছে। খামারের লোকজন অস্ত্রের ও প্রাণ ভয়ে বাঁধা দিতে পারেননি।

র‍্যাব হেফাজতে থানায় অভিযুক্ত চাঁন্দা ডাকাতের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁন্দা ডাকাতের ভাই মো.দিদার বলেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি চুরির অভিযোগও নেই। ষড়যন্ত্র করে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে কোন বাহিনী নেই।

র‍্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু আরও বলেন,এছাড়াও গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে চরজব্বর ও হাতিয়া থানায় হত্যার চেষ্টাসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি ও উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গুলির বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।