কঠিন সময়ে মেয়র খোকন
দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যেতে পারেন মেয়র খোকন

কঠিন সময় পার করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। দলীয় হাইকমান্ড থেকে ঢাকা সিটি নির্বাচনের মনোনয়ন না পাওয়া থেকে শুরু।
শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে তার এপিএস শেখ কুদ্দুসকে।
এবার তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি এসেছে খোদ দুদকের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, আমরা শুধু পিএস-এপিএসদের জিজ্ঞাসাবাদেই কাজ শেষ করব না।
অনিয়ম-দুর্নীতিতে আর যারাই জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আমরা বলব ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’।
এদিকে মেয়াদের শেষ সময়ে ১৫-২০টি জাতীয় দৈনিকে চার পৃষ্ঠা করে নিজের গুণগানের বিজ্ঞাপন প্রচারেও পড়েছেন সমালোচনার মুখে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বিজ্ঞাপন নগরীর কোনো উন্নয়ন কাজে লাগবে কি না, নগরবাসীর বোধগম্য হচ্ছে না কিছুতেই।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে ‘দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২০’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নীরব না।
আমাদের যে চোখ নেই তা না। দুর্নীতি যেখানেই ঘটেছে সেখানেই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং আমার জানা মতে অলরেডি একটি মামলা হাইকোর্টে আছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, দুর্নীতিটা কীভাবে ঘটেছে সেটা যদি পিএস-এপিএসরা বলতে পারে আমরা খুঁজে বের করব অবশ্যই। সাঈদ খোকনকে ‘মিস্টার টেন পারসেন্ট’ বলে ডাকা হলেও তার বিরুদ্ধে দুদক নীরব কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ পারসেন্ট বা ৫ পারসেন্ট এসব বিষয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে দুর্নীতি হয়েছে কি না। সেটা যদি ১ শতাংশও হয় সেটাও দুর্নীতি। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আমরা বলব ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সুতরাং চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই যে আমরা পিএস-এপিএস দিয়ে শেষ করব।
পিএস-এপিএস ছাড়াও যারা যুক্ত ছিলেন, যুক্ত হয়েছেন বা যুক্ত আছে আমরা খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কাউকে ডাকতে আমাদের কলম কাঁপেনি। আমরা ডাকি তাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আমরা বলতে চাই, আপনি আপনার বক্তব্য বলে যান। বক্তব্য যদি সঠিক হয় আমরা তা গ্রহণ করি। সঠিক না হলে তা অন্যভাবে শনাক্ত করার চেষ্টা করি।
দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাঈদ খোকনের এপিএস শেখ কুদ্দুসকে হাজির হতে ১৪ জানুয়ারি নোটিস পাঠায় দুদক। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা নোটিসটি মেয়র বরাবর পাঠিয়ে তার এপিএস কুদ্দুসকে ২১ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাঈদ খোকনকে সবচেয়ে বেশি সমালোচনায় পড়তে হয় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত চার পৃষ্ঠা করে বিজ্ঞাপন প্রদানের জন্য।
এসব বিজ্ঞাপনের প্রায় প্রতিটি পাতাতেই নিজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি তিনি কোন কোন দেশের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এসব ছবি।
যা জনগণের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে যে সিটি করপোরেশনের ফান্ড থেকে এত বড় অর্থ খরচের যুক্তিকতা কি।
প্রায় ১৫-১৬টি জাতীয় পত্রিকায় এই বিজ্ঞাপনগুলো প্রচারের জন্য করপোরেশনকে গুণতে হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। যা নগরের অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হলেই জনগণ উপকৃত হতো বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে এ বিষয়ে নিজের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন মেয়র সাঈদ খোকন। দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্যের প্রেক্ষিতেও তার কিছু বলার নেই উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, দুদক চেয়ারম্যান কি বলল তা এখনও (এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) আমার কানে আসেনি। আর বিজ্ঞাপন প্রদান সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই মেয়র।