ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯শে মাঘ ১৪৩১


ঝিনাইগাতীতে পুলিশ সদর দপ্তরের দাপটে সরকারি কর্মচারীর বালু লুটপাটের অভিযোগ


২১ জানুয়ারী ২০২৫ ২০:১৬

আপডেট:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০২:৪৬

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে পুলিশ সদর দপ্তরের দাপট দেখিয়ে ওই দপ্তরে কর্মরত আল আমিন নামে এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে বালু লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। আল আমিন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার রুপারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশ সদর দপ্তরের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ।

জানা গেছে, আল আমিন একই এলাকার সামীম আহমেদসহ কয়েকজন মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে বালু ব্যাবসা করে আসছেন। ওই সিন্ডিকেটের প্রধান আল আমিন কখনো তার পিতা সুলতান আলমের নামে আবার কখনো অন্য জনের নামে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীও সোমেশ্বরী নদীর বালু মহাল ইজারা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে আল আমিন পুলিশ সদর দপ্তরের দাপটে দীর্ঘদিন ধরে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছেন।

স্থানীয়রা জানান, আল আমিন পুলিশ সদর দপ্তরে চাকুরি করার কারনে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে কেউ তার বালু লুটপাটের বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। এ সুবাদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে নিয়ে সামীম, আল আমিন সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে বালু লুটপাট চালিয়ে আসলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

১৪৩২ বাংলা সালের শুরু থেকেই সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পান সামীম, আল আমিন সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই বালু মহালটি ইজারা দেয়া হয়। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে শেয়ারদার নিয়ে সামীম আল- আমিন সিন্ডিকেট বছরের শুরু থেকেই ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসিল। গতবছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটার পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মিদের শেয়ার বাতিল করে বিএনপি নেতাকর্মীকে শেয়ারদার নিয়ে সামীম- আল আমিন সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। সোমেশ্বরী নদীর শুধু তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর এলাকায় বালু উত্তোলন অনুমতি থাকলেও ইজারা বহির্ভূত এলাকা খাড়ামুড়া, বালিজুরি, রাঙ্গাজান, জোকাকুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে শতশত একর এলাকা থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসিল। শুধু তাই নয় কর্ণঝোড়া নদী,বাঁকাকুড়া এলাকার কালঘোষা নদী, বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন বালু মহালের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। বন ধ্বংস করে এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু অবাধে লুটপাট চালিয়ে আসছে বালুখেকোরা। বালুদস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে পাহাড় ও নদীর পাড়।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, শালচুড়া, খৈলকুড়া,ডাকাবর,রাংটিয়াসহ বিভিন্ন হাট বাজার, গ্রামেগঞ্জে, পাড়ামহল্লায় রাস্তার পাশে অংখ্য স্থানে অবৈধ বালু স্তুপ করে রেখে বেচা-কেনা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে শতশত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বেপরোয়া ভাবে বালু উত্তোলনের কারনে বালিজুরি সেতু, বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন বিভাগের সামাজিক বন হুমকির মুখে পড়েছে। ট্রাক, মাহিন্দ্র, ট্রলিগাড়িসহ ভারি যানবাহনে দিনে রাতে বালু সরবরাহের কারণে রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরেছে পরিবেশের ভারসাম্য। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে। অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে সাজাও দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বালু উত্তোলন যন্ত্র। করা হয়েছে জরিমানা। কিন্তু বালু লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে বালু লুটপাট বন্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে বালুখেকোদের তোপের মুখেও পরতে হচ্ছে প্রশাসনকে। ফলে বালু লুটপাট বন্ধে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন । বন্ধ হচ্ছে না বালু লুটপাট।

এ বিষয়ে কথা বলতে আল আমিনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সামীম আহমেদ অন্য সকল বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন ড্রেজার মেশিন মালিকরা তাদের কোন কথাই শুনেন না। এ দায় তারা নিতে অস্বীকার করেন। অবশেষে ১৬ জানুয়ারি উপজেলা প্রশাসন বালু মহালের ইজারাদার বালু মহালের ইজারার নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন। বালু মহালের টোল আদায় ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক বলেন বালু মহালের ইজারাদার বালু উত্তোলনের নীতিমালা ভঙ্গ করে বালু উত্তোলনের দায়ে ইজারাদারকে কারন দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।